জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের গুণাবলী
♦ এক- নরম দিল হওয়া
যাদের অন্তর নরম হবে, যারা খোশ মেজাজের অধিকারী হবে, সর্বদা আল্লাহ-ভীতু হয়, কারো কোনো ক্ষতিকারক নয়, ধৈর্যশীল ব্যক্তি, এমন লোক জান্নাতী হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ»
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের ন্যায়[1]”।
♦ দুই- দুর্বল অসহায় হওয়া:-
জান্নাতে গরীব-মিসকিন, ফকির, পরমুখাপেক্ষী, দুর্বল লোকদের সংখ্যাধিক্য হবে। পক্ষান্তরে যারা তাদের বিপরীত হবে, অর্থাৎ অহংকারী, দুশ্চরিত্র ও ঝগড়াটে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
عَنْ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ رضى الله عنه سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَال: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ صلى الله عليه وسلم كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهُ لَأَبَرَّهُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ»
“হারেসা ইবন ওহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না?” সাহাবাগণ বললেন: হ্যাঁ বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক দুর্বল, লোক চোখে হেয়, কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন।” অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের কথা বলব না? তারা বললেন: বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র, অহংকারী ব্যক্তি[2]।”
♦ তিন- নম্র-ভদ্র ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে:-
নম্র-ভদ্র, মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও মানুষের কাছের লোক- যাকে মানুষ বিপদ আপদে কাছে পায়- এমন খোশ মেজাজ, পরিচিত ও ভাল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ধরনের লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنْ النَّاسِ»
“ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নরম দিল ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম”। যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[3]।
♦ চার- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণকারী জান্নাতে যাবে:-
যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে। পক্ষান্তরে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করবে না সে জাহান্নামে যাবে। সুতরাং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা নিহিত। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهُ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى »
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে তবে ঐ সমস্ত লোক ব্যতীত যারা অস্বীকার করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানী করে সে অস্বীকার করে[4]।”
♦ পাঁচ- দৈনিক বারো রাকাত সালাত আদায়কারী
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি প্রতি দিন বারো রাকাআত সালাত (ফজরের পূর্বে দুই রাকাআত, যোহরের পূর্বে চার রাকাআত, পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত, এশার পরে দুই রাকাআত সুন্নত) আদায় করে সে জান্নাতে যাবে। প্রমাণ:
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رضي الله عنها زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা ˆরাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয ব্যতীত বারো রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন[5]।”
♦ ছয়-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে
যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত করবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْنِينِي مِنْ الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِي مِنْ النَّارِ قَالَ: «تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ ذَا رَحِمِكَ فَلَمَّا أَدْبَرَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم إِنْ تَمَسَّكَ بِمَا أُمِرَ بِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আবূ আয়্যুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন: আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। যখন ঐ লোক ফিরে যেতে লাগল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে যা করতে বলা হল, যদি সে এর ওপর আমল করে তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[6]।
♦ সাত-তাহাজ্জুদ আদায়কারী, রোজা পালনকারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী:
মনে রাখবে, চরিত্রবান, তাহাজ্জুদগুজার, অধিক পরিমাণে নফল রোযা আদায়কারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী জান্নাতে যাবে। এ ধরনের লোকদের জন্য জান্নাতে বিশেষ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রমাণ-
عَنْ عَلِيٍّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهُ؟ قَالَ هي لِمَنْ أَطَابَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ»
“আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহিরের সব কিছু দেখা যাবে। আবার বাহির থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন: ঐ ব্যক্তির জন্য যে ভাল ও নরম কথা, বলে, অন্যকে আহার করায়, অধিক পরিমাণে নফল রোযা রাখে, আর যখন লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন উঠে সে সালাত আদায় করে[7]।”
♦ আট:- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ জান্নাতে যাবে:-
ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, অপরের প্রতি অনুগ্রহকারী, নরম অন্তর, কারো নিকট কোন কিছু চায়না এমন ব্যক্তিও জান্নাতে যাবে।
عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قال: «ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ»
“ইয়াদ্ব ইবন হিমার মাজাশে‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে। এক- ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, সত্যবাদী, নেক আমলকারী। দুই- ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়ের সাথে এবং প্রত্যেক মুসলমানের সাথে দয়া করে। তিন-ঐ ব্যক্তি যে লজ্জা স্থানকে সংরক্ষণ করে এবং বিনা প্রয়োজনে কারো নিকট কোন কিছু চায় না[8]।
♦ নয়- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনায় আনন্দ অনুভবকারী, ইসলামকে সন্তুষ্ট চিত্তে স্বীয় দ্বীন হিসেবে বিশ্বাসকারীও জান্নাতে যাবে।
عَنْ اَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ رَضِيتُ بِاللهُ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ»
“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[9]।
♦ দশ:- দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করা:-
দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করে সু-শিক্ষা দানকারী এবং বালেগা হওয়ার পর তাদেরকে সু-পাত্রে পাত্রস্থকারী ব্যক্তিও জান্নাতি হবে। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ »
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দুইজন কন্যাকে তাদের প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল, কিয়ামতের দিন আমি ও ঐ ব্যক্তি এক সাথে উপস্থিত হব। একথা বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন (যে এভাবে)[10]।
♦ এগার- ওযুর পর দুই রাকাআত নফল সালাত (তাহিয়্যাতুল ওযু) রীতিমত আদায়কারীও জান্নাতি হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْغَدَاةِ «يَا بِلَالُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الْإِسْلَامِ منفعة فاني فَإِنِّي سَمِعْتُ اللليلة خشف نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ » قَالَ بلال مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي منفعة من أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا تَامًّا فِي سَاعَةِ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের নামাযের পর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি[11]।
♦ অপর একটি হাদিসে বর্ণিত-
عن عقبة بن عامر رضى الله عنه قال كانت علينا رعاية الإبل فجاءت نوبتي فروحتها بعشي فأدركت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يحدث الناس فأدركت من قوله « ما من مسلم يتوصأ فيحسن وضوءه ثم يقوم فيصلى ركعتين مقبل عليهما بقلبه و وجهه إلا وجبت له الجنة »
“উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল উট চরাবার। যখন আমার পালা আসল তখন আমি এক বিকালে সেগুলো ছেড়ে আসলাম। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে তিনি মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন, তখন তার যে কথা আমি ধারণ করতে পেরেছি তার মধ্যে ছিল, “তোমাদের যে কেউ ওযু করল, আর সে তার ওযু সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত সালাত ভালোভাবে আদায় করল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[12]।”
♦ বার- যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে:-
এক-যে নারী সময় মত যথাযথ সালাত আদায় করে। দুই- যে নারী তার স্বামীর অনুগত স্ত্রী হয়। তিন- যে নারী রমযান মাসের রোজা পালন করে। চার-যে নারী তার লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে। সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قال: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا ، وَصَامَتْ شَهْرَهَا ، وَحَصَنَتْ فَرْجَهَا ، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا قِيْلَ لَهَا اَدْخُلِيْ الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ»
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর[13]।
♦ তের- শহীদ, নবজাত শিশু ও জীবন্ত প্রোথিত সন্তান:-
আম্বিয়া, শহীদ, মৃত্যুবরণকারী ঈমানদারদের নবজাতক শিশু এবং জীবন্ত প্রোথিত সন্তান (জাহিলিয়াতের যুগে যা করা হত) তারা জান্নাতি হবে।
حَسْنَاءُ بِنْتُ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنها قَالَتْ حَدَّثَنَا عَمِّي قَالَ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَنْ فِي الْجَنَّةِ؟ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم :«وَالشَّهِيدُ فِي الْجَنَّةِ وَالْمَوْلُودُ فِي الْجَنَّةِ وَالْوَئِيدُ فِي الْجَنَّةِ»
“হাসনা বিনতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাকে আমার চাচা এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ধরনের লোকেরা জান্নাতি হবে? তিনি বললেন: শহীদরা জান্নাতি। মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু জান্নাতি। (জাহিলিয়াতের যুগে) জীবন্ত প্রোথিত শিশু জান্নাতি[14]।”
♦ চৌদ্দ-আল্লাহর পথের সৈনিক:
আল্লাহর পথে জিহাদকারী জান্নাতি হবে। আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শহীদ হলে, সে অবশ্যই জান্নাতি। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهُ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ »
“মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ করেছে যতক্ষণ কোনো উটের দুধ দোহন করতে সময় লাগে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব[15]।
♦ পনের- মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক:
মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক জান্নাতে যাবে। অধিকাংশ মানুষকে তার তাকওয়া ও সুন্দর চরিত্র জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর অধিকাংশ মানুষকে তার মুখ ও লজ্জা-স্থান জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ: «تَقْوَى اللهُ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল কোন আমলের কারণে সর্বাধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও উত্তম চরিত্র[16]।
[1] মুসলিম, জান্নাত ও তার নেয়ামত সমূহের বর্ণনা অধ্যায়, হাদীস নং ২৮৪০।
[2] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫৩।
[3] আহমদ, ১/৪১৫। হাদীস নং ৩৯৩৮।
[4] বুখারি, কুরআন ও সূন্নাহকে আকড়ে ধরা বিষয় আলোচনা অধ্যায়। হাদীস নং ৭২৮০।
[5] মুসলিম, মুসাফিরদের সালাত আদায় করা অধ্যায়। হাদীস নং ৭২৮।
[6] মুসলিম কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: যে ঈমান একজন মুমিনকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। হাদীস নং ১৩।
[7] তিরমিযি, জান্নাতের আলোচনা। পরিচ্ছেদ: জান্নাতের কামরাসমূহের বৈশিষ্ট্য; ২/২০৫১, হাদীস নং ১৯৮৪।
[8] মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ, পরিচ্ছেদ: জান্নাতী ও জাহান্নামীদের গুনাগুণের বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ২৮৬৫।
[9] আবু দাউদ, বিতির অধ্যায়, পরিচ্ছেদ ইস্তেগফার বিষয়ে আলোচনা, ১/১৩৫৩, হাদীস নং ১৫২৯।
[10] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস-সিলা, কন্যা সন্তানের প্রতি দয়া করা বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ২৬৩১।
[11] বুখারি ও মুসলিম, দেখুন সংক্ষিপ্ত মুসলিম, হাদিস নং- ১৬৮২।
[12] মুসলিম, হাদিস: ১৪৪
[13] ইবনে হিব্বান, সহীহ জামে আসসগীর ১ম খণ্ড হাদিস নং-৬৭৩
[14] আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং- ২/২২০০
[15] তিরমিযি, জিহাদের ফযিলত অধ্যায়, হাদিস নং-২/১৩৫৩
[16] তিরমিযি, কিতাবুল বির ওয়াসসিলা, পরিচ্ছেদ: উত্তম চরিত্র বিষয়ে আলোচনা।
Labels: পুন্য কাজ সমুহ
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এবং স্ত্রীকে প্রহার করা সম্বন্ধে :-
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ তায়ালা চান তারা যেন পরস্পর সুখে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। কিন্তু, মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে তাদের সেই মধুর জীবনে অমানিশার কালো মেঘ উকি দিতে পারে। সেসব বিষয়ের সমাধান নিয়েই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলোচনা করেছেন সুরা নিসার ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াতে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34) وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا (৩৫)
অর্থাৎ, তোমরা যে সমস্ত স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের সম্বন্ধে (বড় ধরণের) আর কোন সিদ্ধান্ত নিওনা। আল্লাহ তায়ালা সবার উপরে শ্রেষ্ঠ। আর যদি তাদের মধ্যে বিরোধের আশংকা কর তাহলে, তার পরিবার ও তোমার পরিবারের মধ্যকার একেকজন লোককে দিয়ে শালিস করতে প্রেরণ কর। তারা উভয়ের মাঝে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছু অবহিত। (সুরা নিসা: ৩৪-৩৫)
এই আয়াত দু’টোতে আল্লাহ তায়ালা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনরূপ সমস্যা ও মনোমালিন্যতার সৃষ্টি হলে তা সমাধানের বেশ কয়েকটা সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত অধিকারের বাইরে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য হলে সেগুলো অবলম্বন করে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আয়াতগুলোতে। নিম্নে ক্রমানুসারে সেগুলো উল্লেখ করা হল।
১। বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে সংশোধন করতে হবে।
২।নিজের ঘরের মধ্যেই তার বিছানা পৃথক করে দেবে।ঘরের বাইরে বিছানা করে দিলে ব্যাপারটা তৃতীয়পক্ষের কানে চলে যেতে পারে।ফলে,সহজে সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩।মৃদু প্রহার করবে।অমানুসিকভাবে প্রহার ইসলামে নিষিদ্ধ।
৪।ছেলে-মেয়ে উভয়ের পক্ষ থেকে একজন করে লোক নিয়ে সালিশ করতে হবে।
৫। উপরের একটা বিষয় অনুসরণের দ্বারাই যদি স্ত্রী সংশোধিত হয়ে যায় তাহলে,পরবর্তী দফা বাস্তবায়নের কোন প্রয়োজন নেই।সংশোধনের পর কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে এখানে নিষেধ করা হয়েছে।
ইসলামিক স্কলারগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: স্ত্রী যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে, তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সংশোধন করতে হবে। কারণ, সেও মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। তাকে বুঝাতে পারলে সামনে তার এ ভুল আর হবে না। যদি তাতেও তার সংশোধন না হয় তাহলে, তার শয্যা পৃথক করে দিতে হবে। এখানে ঘর পৃথক করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। কেননা, ঘর পৃথক করে দিলে সংশোধনের পরিবর্তে আরও ক্ষতির সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিজ ঘরের মধ্যে রেখেই পৃথক শয্যায় রাখতে হবে যেন সে, তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে। তখন ফিরে আসলে ভাল কথা। এখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত বিষয়টা তৃতীয় কারও কানে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করে নেয়ার চেয়ে উত্তম সমাধান পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজেদের ভিতরের এ ব্যাপারটা তৃতীয়পক্ষ জেনে ফেললে তাতে সমস্যার সমাধান হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার দ্বিতীয় জনের (যার বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে) মনোকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে, তাদের মধ্যকার বিশ্বাসে ফাটল ধরতে পারে।
তবে, এখানে আরেকটা কথা বলতে হয়-তা হল সর্বদা স্বামীর উদার দিল সম্পন্ন হওয়া উচিত। এমনও হতে পারে যে, স্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চায়; কিন্তু, মনের মধ্যকার লজ্জা ভাঙ্গতে পারছে না। সেই পরিস্থিতি স্বামীকেই আচ করে নিতে হবে। তাহলে, আশা করা যায় দাম্পত্য জীবনে অমানিশার কালো মেঘ উকি দিতেও সাহস পাবে না ইনশাল্লাহ। সর্বোপরি একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা থাকা দরকার।
উপরোক্ত উপদেশ এবং শয্যা-ত্যাগেও যদি সে সংশোধন না হয় তাহলে, তাকে মৃদু প্রহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে, শর্ত করা হয়েছে যে, প্রহার যেন কঠোর না হয়।
তবে, বহু সংখ্যক হাদীসে প্রহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, ভালবাসা ও মহব্বতে যত সহজে কাজ হয়, মারধর করে ততসহজে সে কাজ করানো যায় না। একজন ছাত্রকে ভালবেসে যতটুকু শিক্ষা দেয়া যায়, প্রহার করে ততটুকু শিক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:- তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম নয় যে, তার স্ত্রীদেরকে প্রহার করে।
আবু দাউদ শরীফসহ বেশ কিছু হাদীসের কিতাবে এসেছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
لاَ تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে (স্ত্রীদেরকে) মারধোর করো না। (আবু দাউদ, নাসায়ী, দারেমী, মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকী)
একবার রাসুল (সাঃ) এর বাড়ীতে প্রচুর সংখ্যক মহিলা (বায়হাকী শরীফে এসেছে ৭০জনের কথা) এসেছিলেন তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করতে যে, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমার স্বামী আমাকে প্রহার করে। পরের দিন সকাল বেলা রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করে দিলেন, গতরাতে আমার পরিবারের কাছে অনেক মহিলা এসেছিলেন তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে মারধোর করার অভিযোগ নিয়ে। শুনে রাখ! আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তিরা ভাল নয়। (আমার মতে এর সর্বোত্তম অনুবাদ হল-ওরা মানুষ নয়!! অর্থাৎ, মানুষেরা এমন কাজ করতে পারে না। ) (আবু দাউদ, বায়হাকী, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান,মুসনাদে শাফেয়ী, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক )
বুখারীসহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে বলা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ
অর্থাৎ, …….. তাদেরকে এমনভাবে প্রহার কর যেন তা “মুবাররিহ” না হয়।
“মুবাররিহ” এর ব্যাখ্যায় হযরত আ’তা (রাঃ) বলেছেন: আমি মুফাসসিরদের সরদার হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন-এর অর্থ হচ্ছে মিসওয়াক কিংবা অনুরুপ কিছু দিয়ে প্রহার করা। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে বগভী,ফাতহুল ক্বাদীর, রুহুল মাআ’নী, তাবারী, শা’রাবী,খাযেন,বাহরুল মুহীত, তাফসীরে ইবনে হাতেম,দুররুল মানসুর)
উল্লেখ্য যে, এখানে মিসওয়াক বা অনুরুপ কিছু দিয়ে মৃদু প্রহার করার অনুমতি রয়েছে তবে, তা দিয়ে গুতা দেয়ার অনুমতি নেই।
আমরা সকলেই জানি শুরাইহ নামক একজন বিচারক ছিলেন হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত আমলে। তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারের একজন মুর্ত প্রতীক। আলী (রাঃ) খলীফা (রাষ্ট্রপ্রধান) থাকাকালে তিনি একবার আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধেও বিচারে রায় দিয়েছিলেন। তার দাম্পত্য জীবনের একটা ঘটনা খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। উক্ত ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
বিচারক শুরাইহ বনী তামীম গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহ পরবর্তী একান্ত সাক্ষাতের দিনের কথা প্রসংগে তিনি বলেছেন:
সেদিন আমি ওজু করলাম। তিনিও (স্ত্রী) ওজু করলেন। আমি নামাজ পড়লাম তিনিও আমার সাথে নামাজে দাড়ালেন। নামাজ শেষ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করলাম তিনি যেন তার মধ্যে বরকত দান করেন এবং তার সকল অনিষ্ট থেকে আমাকে হেফাজত করেন।
তিনি হামদ ও সানা পড়ে কথাবার্তা শুরু করলেন। তাদের কথোপকথন নিম্নে উপস্থাপিত হল।
স্ত্রী: আমি আপনার নিকট একজন অপরিচিত মেয়ে। আমি জীবনে কখনো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথ ছাড়া অন্য কোন পথে চলি নাই। আর আপনিও আমার কাছে অপরিচিত। আমি আপনার স্বভাব সম্বন্ধে জানি না। আপনি কি কি পছন্দ করেন আর কি কি অপছন্দ করেন তা আমার জানা নেই। সুতরাং, সে বিষয়গুলো আমাকে বলে দিলে আমি আপনার পছন্দানুযায়ী কাজ করব এবং, অপছন্দনীয় কাজ বা জিনিস থেকে দূরে থাকব।
কাজী শুরাইহ: (গুনে গুনে বলে দিলেন) আমি অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে পছন্দ করি। আর অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে অপছন্দ করি।
স্ত্রী: আপনি আপনার শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয়দের সম্বন্ধে বলুন। আপনি কি চান যে, তারা আপনার বাড়ীতে বেড়াতে আসুক?
কাজী শুরাইহ: আমি বিচারক মানুষ। আমি চাই না যে, তারা আমাকে বিরক্ত করুক। (বিরক্তির পর্যায়ে না গেলে সমস্যা নেই )
স্ত্রী: আপনার প্রতিবেশীর মধ্যকার কাদেরকে আপনার বাড়ীতে আসতে অনুমতি দিবেন?
কাজী শুরাইহ: অমুক অমুক আসতে পারে। (এক এক করে সব বর্ণনা করে দিলেন)
কাজী শুরাইহ বলেন: আমি ঐ দিন তার কাছে শ্রেষ্ঠ রাত অতিবাহিত করলাম। তার নিকট ৩ দিন থেকে কোর্টে (বিচারিক কাজে) গেলাম। এরপর থেকে এমন কোন দিন পাইনি যে দিনটা আমার কাছে আগের দিনের চেয়ে উত্তম নয়।
এভাবে একবছর অতিবাহিত হল। কাজী শুরাইহ দেখলেন তার বাড়ীতে একজন বৃদ্ধা মহিলা উপদেশ ও নসীহতমুলক কথাবার্তা বলছে।
কাজী শুরাইহ: (স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) যায়নাব! এই বৃদ্ধা লোকটি কে?
স্ত্রী: আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী।
কাজী শুরাইহ: (শাশুড়ীকে উদ্দেশ্য করে) আমাদের বাড়ীতে আপনাকে স্বাগতম।
শাশুড়ী: হে, আবু উমাইয়া! (কাজী শুরাইহীর উপাধী, অর্থ হল-উমাইয়ার পিতা। আরবদের বৈশিষ্ট্য হল- তারা বড় সন্তানের নাম ধরে পিতাকে ডাকে) আপনারা কেমন আছেন? কেমন যাচ্ছে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন?
কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, খুব সুন্দরভাবেই চলছে আমাদের জীবনযাপন।
শাশুড়ী: আপনার স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন?
কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, আমি তাকে অত্যন্ত উত্তম স্ত্রীরূপে পেয়েছি। তাকে পেয়েছি জীবনের উত্তম সংগীনী হিসেবে। আপনারা তাকে উত্তমরূপেই মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তাকে উত্তমভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছেন।
শাশুড়ী: মহিলাদের দুই অবস্থায় কখনো মন খারাপ থাকে না। প্রথমটি হল-স্বামীর কাছ থেকে কিছু পেলে আর পুত্র সন্তান প্রসব করলে। যদি এমন কোন বিষয় দেখেন যা আপনাকে ক্রোধান্বিত করে তার ঔষধ হচ্ছে-প্রহার করা।……
কাজী শুরাইহ বলেন আমার বাড়ীতে আমার শাশুড়ী প্রতি বছর একবার করে আসতেন। আমাদের বাড়ীতে এসে তার কলিজার টুকরা সন্তানকে বিভিন্ন উপদেশ এবং নসীহত করে যেতেন।
তিনি বলেন: আমি এ স্ত্রীর সাথে গত বিশ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করলাম অথচ, তার উপর আমি কখনো রাগ করিনি(রাগান্বিত হওয়ার মত কিছু পাইনি)। অন্য কথায় বলা যায়-আমাদের ভিতর বিগত বিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন মনমালিন্যের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। তবে, শুধুমাত্র একদিন আমি তার উপর রাগান্বিত হয়েছিলাম। তবে, সেদিনকার পরিস্থিতির জন্য আমি নিজেই দোষী ছিলাম। বরং, আমিই তার উপর জুলুম করেছিলাম। বাস্তবে তার কোন দোষ ছিল না।
এ ঘটনাটা আমাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য একটা আদর্শ হতে পারে।
Labels: পুন্য কাজ সমুহ, মন্দ কাজসমুহ
৭ প্রকার লোকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, তা গীবত হয় না।
৭ প্রকার লোকের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, তা গীবত হয় নাঃ হুজ্জাতুল ইসলাম ( ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) , মুজাদ্দিদে মিল্লাত, হাকিমুল হাদীস হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুপ্রসিদ্ধ ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ কিতাবে পবিত্র কুরআন সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক বর্ননা করেছেন – ৭ প্রকার ব্যক্তির দোষত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হয় না।
নিচে এই সাত প্রকার গিবতের বর্ণনা করা হলওঃ-
1. এক নম্বরে বলা হয়েছে, কোনো লোক যদি কোনো কাজী সাহেবের কাছে যায় বিচারের জন্য, বিচারপ্রার্থী হয়ে ও বিচারের জন্য যদি সে সত্য কথা বলতে গিয়ে বিপরীতপক্ষের দোষত্রুটি বর্ণনা করে, তাহলে সেটা গীবত হবে না।
2. দুই নম্বরে বলা হয়েছে, সে যদি কোনো মুফতী সাহেবের কাছে যায় ফতোয়ার জন্য, তখন সে ফতোয়ার জন্য যেটা সত্য সেটাই বলবে, এতে তার গীবত হবে না।
3. তিন নম্বরে বলা হয়েছে, যারা রাজা-বাদশাহ, আমীর-ওমরাহ শাসক গোস্ঠি তাদের ইছলাহ বা সংশোধন করার জন্য দোষত্রুটিগুলি যদি ধরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেটা গীবত হবে না।
4. চার নম্বরে বলা হয়েছে, অহরহ পাপে লিপ্ত ফাসিকদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে, সেটা গীবত হয় না। ফাসিক বলা হয় যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা হামেশা তরক করে তাদেরকে ।
5. পাঁচ নম্বরে বলা হয়েছে, যারা লুলা-ল্যাংড়া, বোবা-তোতলা নামে মশহূর তাদেরকে লুলা-ল্যাংড়া, বোবা-তোতলা বলে ডাকা হলে, সেটা গীবত হবে না।
6. ছয় নম্বরে বলা হয়েছে, যদি কোনো পিতা তার ছেলেকে বিয়ে করাতে চায় বা মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়, বিপরীত পক্ষের কাছে গিয়ে সেই ছেলে বা মেয়ের প্রতিবেশীর কাছে যদি, ঐ ছেলে বা মেয়ে সম্বন্ধে সংবাদ নেয় আর প্রতিবেশীর লোকেরা যদি সত্য কথা বলে অর্থাৎ সেই ছেলে বা মেয়ের দোষত্রুটিগুলি বলে দেয়, তাহলে সেটা গীবত হবে না। কারণ এখানে একজনের জীবন নিয়ে প্রশ্ন।
7. আর সপ্তম যেটা বলা হয়েছে, যারা উলামায়ে ‘সূ’ বা দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী নামধারী আলিম পীর স্কলার যারা দ্বীনকে বিক্রি করে দুনিয়া অর্জন করে, তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করলে সেটা গীবত হবে না।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সঠিক বিষয়টি বুঝার তৌফিক দান করুন-আমীন! এখন আপনি যদি ইমাম গাজ্জালি থেকে নিজেকে বড় আলেম বড় জ্ঞানি মনে করেন তাহলে আমার কিছু বলার নাই।
Labels: পুন্য কাজ সমুহ
দৃষ্টিকে সংযত রাখার ব্যাপারে :-
আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তা’লা ইরশাদ মুবারক করেন যে “মুমিন পুরুষদের বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবহিত।” (পবিত্র সুরাহ আন-নূর শরিফ, আয়াত শরিফ ৩০)
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্ তা’আলা নির্দেশ দিচ্ছেন যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম করেছি ওগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করোনা। হারাম জিনিস হতে চক্ষু নীচু করে নাও। যদি আকস্মিক ভাবে পড়েই যায় তবে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।
হযরত জারীর ইবনে আবদিল্লাহ বাজালী (রা) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে হঠাত দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “সাথে সাথেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবে” [এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম (র) বর্ণনা করেছেন]
হযরত বুরাইদা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) আলী (রা) কে বলেনঃ “হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাত যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্যে ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্যে ক্ষমার যোগ্য নয়। [এই হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ (র) বর্ণনা করেছেন]
হযরত আবূ উমামা (রা) হতে বর্ণীত, তিনি রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ছয়টি জিনিসের দায়িত্ব নাও তাহলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিচ্ছি। ছটি জিনিস হলোঃ কথা বলার সময় মিথ্যা বলবেনা, আমানতের খিয়ানত করবেনা, ওয়াদা ভঙ্গ করবেনা, দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, হাতকে যুলুম করা হতে বাঁচিয়ে রাখবে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। [এই হাদীসটি আবুল কাসেম আল বাগাভী (র) বর্ণনা করেছেন]
রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের (রক্ষার) দায়িত্ব নেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেবো। [এই হাদীসটি ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন]
হযরত আবূ উমামা হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেন, “হয় তোমরা তোমাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখবে, নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখবে এবং মুখমণ্ডলকে সোজা রাখবে, না হয় আল্লাহ্ তোমদের চেহারা বদলিয়ে দিবেন। [এই হাদীসটি ইমাম তিবরানী (র) বর্ণনা করেছেন]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ দৃষ্টি শয়তানী তীরসমূহের মধ্যে একটি তীর। যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র ভয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, আল্লাহ্ তার অন্তরে এমন ঈমানের জ্যোতি সৃষ্টি করে দেন যে, সে ওর মজা উপভোগ করতে থাকে।
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ ইবনে আদমের জন্য ব্যাভিচারের একটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটা সে নিঃসন্দেহে পাবেই। দু’চোখের যিনা হল দেখা, দু’কানের যিনা হল যৌন উত্তেজক কথাবার্তা শ্রবণ করা, মুখের যিনা হল আলোচনা করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা ঐ উদ্দেশ্যে যাতায়ত করা। অন্তর ঐ কাজের কুপ্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং তার আকাংখা সৃষ্টি করে। আর যৌনাংগ এমন অবস্থাকে সত্যায়িত বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। [এই হাদীসটি ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেছেন]
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণীত, রাসূল (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই কাঁদবে, শুধুমাত্র ঐ চোখ কাঁদবে না যেই চোখ আল্লাহর হারামকৃত জিনিস না দেখে বন্ধ থেকেছে, আর ঐ চোখ যা আল্লাহ্র পথে জেগে থেকেছে এবং আল্লাহ্র ভয়ে কেঁদেছে, যদিও এ চোখের অশ্রু মাছির মাথার সমানও হয়। {তাফসীর ইবনে কাসীর}
(সংগৃহীত)